শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে যেন কারো নামে মামলা না হয়: টুর্ক

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কারো বিরুদ্ধে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেন মামলা না হয়, তা নিশ্চিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ভলকার তুর্ক বলেন, ‘ফৌজদারি অপরাধের চাবিকাঠি হলো ন্যায়বিচার। সুতরাং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ সর্বক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনদিনের সফরে গত সোমবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান ভলকার তুর্ক। এ সফরে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক করেন সরকারের নির্বাহী, বিচার ও প্রতিরক্ষা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও।
এসব বৈঠকের কথা উল্লেখ করে ভলকার তুর্ক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সুশীল সমাজ, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং অন্যদের সঙ্গে গত দুদিন আলাপ করে একটি বিষয় স্পষ্ট—এবারের আশা দৃশ্যমান। এ পরিবর্তনের ফলে ভিন্ন কিছু হবে। এবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হতে হবে। একই সঙ্গে সংস্কারগুলো টেকসই হতে হবে, যেন গত দশকগুলোর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’
ভলকার তুর্ক বলেন, ‘এবারের আন্দোলনের কেন্দ্রে নারীও ছিলেন। সামাজিক ন্যায়বিচার বাস্তবায়নে নারীদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। সুতরাং এ পরিবর্তন এবং পরবর্তী সময়গুলোয় তাদের সম্মুখ সারিতে থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। একই সঙ্গে নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গায় নারীদের প্রাধান্য দিতে হবে। নানা ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষকেও এ পরিবর্তনে যুক্ত করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
জাতিসংঘের এ প্রতিনিধি মনে করেন, গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব একটি জটিল সময় অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। আসন্ন মাসগুলোয় আরো নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হবে। কিন্তু এসব মোকাবেলায় ছাত্র আন্দোলনের স্পিরিট এবং গতি কাজে লাগাতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে ভলকার তুর্ক বলেন, ‘মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহি নিশ্চিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিবৃতিগুলোকে সাধুবাদ জানাই। এগুলো আইন প্রয়োগকারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অসমতাগুলোকে চিহ্নিত করার প্রয়োজনীয়তাও সামনে নিয়ে আসে।’
বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে ভলকার তুর্ক আরো বলেন, ‘অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার মারাত্মক চ্যালেঞ্জ গত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে। তবে একটি বিষয় হলো পরিবর্তন বরাবরই জটিল, যেখানে আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী।’