সম্পর্ক গভীর করতে সঙ্গীকে যেসব প্রশ্ন করবেন

সম্পর্কের শুরুর দিকে একে অপরকে জানার চেষ্টা চলে নানান উপায়ে। কখনও গভীর আলাপে, কখনও আবার ছোট ছোট ঘটনার মাধ্যমে।
তবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য কেবল ভালো লাগা বা একসঙ্গে সময় কাটানোই যথেষ্ট নয়। একজন মানুষ সম্পর্কে সত্যিকারভাবে জানতে চাইলে দরকার সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন, যেগুলো নিজেদেরকে জানতে এবং সম্পর্ককে দৃঢ় করতে সাহায্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ইনোভেশন থ্রিসিক্সটি’ নামের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিচালক এবং ‘স্ট্রাগল ওয়েল, লিভ ওয়েল’ বইয়ের লেখক মনোবিজ্ঞানী ডা. কেভিন গিলিল্যান্ড বলেন, “সম্পর্কে প্রবেশের আগে নিজেকে জানাটা জরুরি। কারণ আপনি কী চান, কীভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করেন— এসব না জানলে অন্যকে বোঝা কঠিন।”
প্রথম ধাপ: নিজেকে জানুন
সম্পর্কের আগে নিজেকে বোঝা জরুরি। নিজের অনুভূতি ও আচরণ বিশ্লেষণ করতে হবে।
এই মানুষটির সঙ্গে থাকাটা সহজ লাগে কি? কেন?
আমি তাদের সঙ্গে থাকলে কীভাবে আচরণ করি?
এমন কিছু আছে কি, যা আমি তাদের কাছে প্রকাশ করি না? কেন?
এখন পর্যন্ত আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আমার অনুভূতি কী?
কোনো কিছু অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে কি?
ডা. গিলিল্যান্ড বলেন, “অস্বস্তিকর অনুভূতিকে অস্বীকার না করে, সেটিকে উপলব্ধি করতে হবে। পরে এ নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলে সমাধানে যেতে হবে।”
দ্বিতীয় ধাপ: সঙ্গীর কথায় কী প্রকাশ পায়?
যখন নিজে প্রস্তুত, তখন কিছু বিষয় খেয়াল করতে পারেন যেমন—
তারা কী কী তথ্য সহজে ভাগ করে, আর কী কী গোপন রাখে?
কোন বিষয়গুলো নিয়ে তারা উচ্ছ্বসিত হয়ে বিস্তারিত বলে?
কোন বিষয় এড়িয়ে যায়?
বন্ধু বা পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে তারা কীভাবে কথা বলে?
আগের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে কীভাবে আলোচনা করে?
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার জন্য তারা কী শুধু অন্যকে দোষ দেয়, নাকি নিজের দিকটাও বিবেচনা করে?
এই প্রশ্নগুলো আপনার কাছে তাদের মানসিক পরিপক্বতা ও আত্মসমালোচনার ক্ষমতা প্রকাশ করে।
তৃতীয় ধাপ: সম্পর্কের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?
তারা কার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ?
কোন বন্ধুত্বগুলো তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
বন্ধুত্বে তারা কী মূল্য দেন?
সম্পর্কের কোন দিকটা তাদের জন্য কষ্টকর?
সম্পর্কের কোন দিকটা উপভোগ করেন?
চতুর্থ ধাপ: অতীতের প্রেমের সম্পর্ক
আগের সম্পর্ক নিয়ে জানার জন্য এই প্রশ্নগুলো সহায়ক—
আগের সম্পর্কে কী কী ভালো দিক ছিল?
কোন দিকটা হতাশাজনক ছিল?
সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন?
কী শিখেছেন সেই সম্পর্ক থেকে?
এখনও কি কোনো অপূর্ণ অনুভূতি রয়ে গেছে?
ডা. গিলিল্যান্ড বলেন, “কেউ যদি এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যায়, তবে সেটা নিয়েও আলাপ করতে হবে। কেন এড়িয়ে যায়, ভবিষ্যতে আলাপ করতে পারবে কিনা।”
পঞ্চম ধাপ: একসঙ্গে সময় কাটানো ও একাকিত্বের চাহিদা
আপনি কীভাবে সময়ের ভারসাম্য বজায় রাখেন?
আপনি কি ব্যক্তিগত জায়গা পছন্দ করেন?
শারীরিক সংযোগ, আদর বা যৌনতাকে কতটা গুরুত্ব দেন?
অন্যদের সঙ্গে থাকলে আপনি শান্ত বোধ করেন, নাকি একা থাকলে?
একা কী কী করতে পছন্দ করেন? যেমন- সিনেমা দেখা বা ভ্রমণ?
ষষ্ঠ ধাপ: মূল্যবোধ ও বিশ্বাস
মানসিক সুস্থতা, সম্পর্কের জন্য দুই জনের মূল্যবোধের মিল থাকা জরুরি। তবে মতের অমিল থাকলেও পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকলে সম্পর্ক টিকে থাকে।
আপনি কত ঘন ঘন পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেন?
সমাজ ও বিশ্বের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
কাজ, পরিবার, স্বাস্থ্য—এই মূল্যবোধগুলো কীভাবে প্রাধান্য দেন?
এসব ভারসাম্যে আপনি কি ভুল করেন?
কী কী ছাড়তে রাজি নন?
সপ্তম ধাপ: বিয়ের সিদ্ধান্তের আগে প্রশ্ন
যদি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে চান, এই প্রশ্নগুলো সাহায্য করবে—
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?
কোন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন (যেমন- কাজের রুটিন, গৃহস্থালি)?
বাসার সাজসজ্জা নিয়ে আপনার কতটা আগ্রহ?
আর্থিক দিকগুলো কীভাবে ভাগ হবে?
আপনার আর্থিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো কী?
আপনার বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা কীভাবে আর্থিক সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে?
অতিথি আপ্যায়ন কেমন গুরুত্ব পায় আপনার কাছে?
আপনি কি পোষা প্রাণী পছন্দ করেন?
সন্তান নেওয়ার বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
এই প্রশ্নগুলো একবারে জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে আলাপ করাই ভালো।
ডা. গিলিল্যান্ড বলেন, “প্রতিটি প্রশ্ন শুধু একটি উত্তর নয়, বরং একটি নতুন আলাপের দরজা। ভালো সম্পর্ক তৈরি হয় বারবার প্রশ্ন করে, মন খুলে শোনার মধ্য দিয়ে।”
তথ্য: বিডিনিউজ