সোমবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৮:২৯, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

অনেক মিত্র সরকারে শরিকানা না পেয়ে উন্মত্ত হয়ে গেছেন: মাহফুজ

অনেক মিত্র সরকারে শরিকানা না পেয়ে উন্মত্ত হয়ে গেছেন: মাহফুজ

একের পর এক শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত, সহিংসতা, কলেজে আক্রমণ ও লুটপাটের মধ্যে ‘মিত্রদেরকেও’ দায় দিয়েছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

তিনি লিখেছেন, “বাম এবং ডান মানসিকতার নেতৃত্ব অভ্যুত্থানে এবং পরবর্তীতে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন।”

টানা দুই দিন ধরে ঢাকায় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, একাধিক কলেজে লুটপাটের মধ্যে তীব্র সমালোচনার মধ্য সোমবার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজে এই স্ট্যাটাস দেন তিনি।

তবে মিত্র আর বাম-ডান মানসিকতার কাদেরকে উদ্দেশ করে এই বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।

“ছাত্র-গণ আন্দোলনের অনেক মিত্রদের হঠকারী ভূমিকা, একটি দল এবং দেশিবিদেশি সুযোগ সন্ধানীর উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশকে অস্থির করে তুলেছে” মন্তব্য করে অভ্যুত্থানের শক্তিকে প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলার অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার কথাও বলেন মাহফুজ।

প্রবল গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার সাড়ে তিন মাসেও দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। একের পর এক শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার কথা বলেছেন খোদ পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির রেশ কাটতে না কাটতেই রোববার পুরান ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা করে লুটপাট চালায় ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সেই কলেজে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছিল। আর এর প্রতিক্রিয়ায় ঘোষণা দিয়ে পরদিন ডেমরার কলেজটিতে পাল্টা হামলা চালায় সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তেজগাঁওয়ে রোববার গভীর রাতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি- বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সংঘাত হয়েছে।

মাহফুজ আলম লেখেন, “এবারের আন্দোলন সাহসী ছাত্র তরুণদের নেতৃত্বে জনগণের আন্দোলন। একটি দল এবং দেশি-বিদেশি সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী গত ৩ মাসে ছাত্রদের ‘অপমান’ করেছে, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন দিয়ে ছাত্রদের মধ্যে বিভেদ ঘটিয়েছে।

“অন্য একটি তরুণ দলকে ‘লেলিয়ে দিয়েছে’ ছাত্রদের বিরুদ্ধে, তদুপরি ছাত্রদের সাথে সম্মানজনক ডিল তো করেইনি, বরং ছাত্রদের তারা শত্রু গণ্য করেছে। তার পরিণতি কি ভালো হচ্ছে, বা হবে?”

ছাত্রদের ‘সংঘাতের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে’ অভিযোগ করে মাহফুজ লেখেন, “হত্যার মাধ্যমে ছাত্রদের বৈধতার সংকট হলে, যারা যারা লাভবান হবে, তারা সবাই এ উসকানি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার সাথে জড়িত। ধীরে ধীরে আমরা সবই বলব। অথবা, আপনারা চোখ খুললেই দেখতে পাবেন।

“বাম এবং ডান মানসিকতার নেতৃত্ব অভ্যুত্থানে এবং পরবর্তীতে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন। তাদের উন্মত্ততা, বিপ্লবী জোশ এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশকে অস্থির করে রেখেছে।”

‘অনেক মিত্র’ই হঠকারীর ভূমিকায় মন্তব্য করে তিনি আরও লেখেন,. “আমরা আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করি। আমরা শিখেছি এবং ব্যর্থতা কাটানোর চেষ্টাও করছি। আমরা আরও চেষ্টা করব সবাইকে নিয়ে এগুনোর। কিন্তু হঠকারিতা এবং ছাত্রদের অন্যায্যতার চেষ্টা এ জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”

ঐক্য গড়ে সব ‘অপচেষ্টা’ রুখে দেওয়ার কথাও বলেন মাহফুজ আলম। তিনি লেখেন, “আমরা ৫ আগস্টের সকালের মতন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এবারের সাংগঠনিকভাবে গড়ে ওঠা ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী মুক্তির সুযোগ তৈরি করবে, ইনশাআল্লাহ।

“এদেশে মানুষকে পদানত করার সাধ্য বিদেশি শক্তির নেই। কিন্তু গোলামির মানসিকতার কিছু গাদ্দার আর হঠকারীর এ শক্তি আছে। যা তারা গত তিন মাসে দেখিয়েছে।… সব অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হবে।”

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়েও সংঘাত হয়েছিল বলেও দাবি করেন এই তরুণ উপদেষ্টা। তিনি লেখেন, “মুক্তিযুদ্ধের পরের ১০-১৫ বছরের ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে ‘হত্যার’ ইতিহাস। যারা চায়নি বাংলাদেশ শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াক, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে দিয়ে ‘হত্যা করিয়েছে’।

“তাদের নিজেদের ভুল ছিল না তা নয়, কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধাগণের একের পর এক হত্যা বাংলাদেশকে কীভাবে পিছিয়ে দিল, তা ইতিহাস একদিন বলবে।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়