ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তারে পাকিস্তানে অভিযান
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরো (এনএবি)। সম্প্রতি ইসলামাবাদে ইমরান খানের দল পিটিআই-এর বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন বুশরা। এর পর থেকেই তিনি পাকিস্তান জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন।
গত ২৬ নভেম্বর সারা দেশ থেকে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে তাঁর সমর্থকেরা পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এসে জড়ো হয়েছিল। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য ছিল ইসলামাবাদের রেড জোন হিসেবে পরিচিত ডি-চক এলাকায় অবস্থান নেওয়া। একপর্যায়ে তারা বড় বড় কনটেইনার দিয়ে তৈরি করে রাখা দেয়াল পাড়ি দিয়ে ডি-চক এলাকায় প্রবেশও করেন।
পিটিআই-এর আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কঠোর হস্তে দমন করেছে পাকিস্তান সরকার। ডি-চক এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে সরাসরি গুলি চালানোর মতো কঠোর বল প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
ইসলামাবাদে পিটিআই-এর বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইমরান খানের বর্তমান স্ত্রী বুশরা বিবি। গত মাসেই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। সাধারণত লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও বুশরা বিবিকে ইসলামাবাদের ইমরান খানের বিক্ষুব্ধ সমাবেশে দেখা গেছে।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ছবিতে দেখা গেছে ইসলামাবাদে বিক্ষুব্ধ মানুষদের মাঝখানে একটি ট্রাকের ওপর পিটিআই-এর কয়েকজন নেতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে এ সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আজ আপনারা একটি প্রতিশ্রুতি দিন। ইমরান খান এখানে না আসা পর্যন্ত আপনারা চলে যাবেন না।’
আন্দোলনের তিন দিন পর আজ শুক্রবার পাকিস্তানের জিও নিউজ জানিয়েছে, বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তারের জন্য রাওয়ালপিন্ডি থেকে এনএবি-এর একটি দলকে খাইবার পাখতুনখোয়ায় পাঠানো হবে। বুশরাকে গ্রেপ্তার করার জন্য স্থানীয় পুলিশের সহায়তাও নেওয়া হবে।
এমন পরোয়ানার বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত ২২ নভেম্বর দেশটির একটি জবাবদিহি আদালত বুশরা বিবির বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। তিনি টানা ৮টি শুনানিতে উপস্থিত না হওয়ায় এই পরোয়ানা জারি করা হয়।
ইতিপূর্বে বুশরা বিবির কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশও পাঠিয়েছিলেন আদালত। সে সময় আদালতে বুশরার পক্ষে একটি মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। তবে এনএবি কর্তৃপক্ষ এতে আপত্তি জানিয়েছে।
যে মামলার জের ধরে বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে, সেই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সহ আরও কয়েকজন অভিযুক্ত রয়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকার এক সম্পত্তি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছিল। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের জাতীয় কোষাগারের ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতি হয়েছে।
ইমরান খান এবং বুশরা বিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা আল-কাদির ট্রাস্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জমি নিজেদের স্বার্থে গ্রহণ করেছিলেন। এই জমি ব্যবহার করে আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
জানায় যায়, ইমরান খানের সরকার ২০১৯ সালে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কাছ থেকে ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ড পাওয়ার জন্য একটি চুক্তি অনুমোদন করেছিল। এই অর্থ ছিল মূলত ওই সম্পত্তি ব্যবসায়ীর জব্দ করা সম্পদ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই মামলায় বুশরা বিবি ও ইমরান খানের আইনি লড়াই সামনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।