মঙ্গলবার   ০৫ আগস্ট ২০২৫ , ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ২১ আগস্ট ২০২৪

৯৩% মানুষ চায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হোক

৯৩% মানুষ চায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হোক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন ৯৩ শতাংশ মানুষ। একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত হবে না। আর ২ শতাংশ পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মত দেননি।

১৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা থেকে ২০ আগস্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত (গতকাল মঙ্গলবার) সাত দিন দৈনিকটির ফেসবুক পেজে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে প্রশ্ন করা হয়, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন কি?’

এই প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৩০ জন। অর্থাৎ তাঁরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে নিজের মতামত জানিয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিপক্ষে, অর্থাৎ ‘না’ ভোট দিয়েছেন ১৯ হাজার ৫৬১ জন।

জরিপে ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’–এর পাশাপাশি ‘মন্তব্য’ নেই এমন একটি ঘর ছিল। মন্তব্য নেই-এর ঘরে ভোট দিয়েছেন ৩ হাজার ৮৪২ জন। ফেসবুকে পরিচালিত এই জরিপে ভোট দিয়েছেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৩০ জন। একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচলিত ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার দাবি তোলেন। এমন প্রেক্ষাপটে এই জরিপটি করা হলো।

দেশে ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্র বিবেচনা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের সময় দেখা গেছে, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেন। কে হলে থাকতে পারবেন আর কে পারবেন না, তা এত দিন নির্ধারণ করতেন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। এখানে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ভূমিকা থাকে না। আওয়ামী লীগের সময় ছাত্রলীগ আর বিএনপির সময় ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছে। অবশ্য মেয়েদের হলে এই নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কম ছিল।

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধু ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ৩৮টি চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারধর ও প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনায় নাম এসেছিল ছাত্রলীগের। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ছাত্রদলকেও এ ধরনের অপরাধে জড়াতে দেখা গেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রায় সব হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে ‘হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’ এ রকম লিখিত অঙ্গীকার নেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্তত ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৬টি মেডিকেল কলেজ ও দুটি সরকারি কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দেশের শীর্ষ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই বছরের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী। এরপর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতনের নানা অভিযোগ এনে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবির মুখে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট প্রশাসন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়