এইচএসসির ফল বাতিলের দাবিতে ঢাকায় সংঘর্ষ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে স্থগিত হওয়া এইচএসসির কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল। এরপর বিষয় ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তবে এই ফলও এখন মানতে চাইছেন না শিক্ষার্থীরা। প্রকাশিত ফল বাতিলের দাবিতে গতকাল রোববার ঢাকাসহ আট শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ১১ শিক্ষার্থী।
ঢাকা ও ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীরা দুপুরের দিকে বোর্ড কার্যালয়ে যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন থামাতে রাতে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার।
১৫ অক্টোবর এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। স্থগিত হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা আন্দোলনের মুখে বাতিলের কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন হয়েছে ভিন্ন পদ্ধতিতে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন করা হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং)। অর্থাৎ এসএসসিতে যে নম্বর পেয়েছিলেন শিক্ষার্থী, সেটা এইচএসসিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আর এইচএসসিতে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্রের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইতিমধ্যে যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। এ জন্য এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সব বিষয়ের ওপর ‘ম্যাপিং’ করে ফলাফল নতুন করে প্রকাশ করতে হবে।
এই দাবিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে ‘এইচএসসি ব্যাচ-২০২৪’ ব্যানারে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বোর্ডের নিরাপত্তায় ওই এলাকায় পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়। আন্দোলনে কৃতকার্য ও অকৃতকার্য উভয় শিক্ষার্থীরা ছিলেন।
বেলা পৌনে ২টার দিকে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে প্রধান ফটকের ভেতরে ঢুকে যান। এ সময় তাঁরা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যানের বিভিন্ন ফাইলপত্র ছুড়ে ফেলে দেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে কর্মচারীরা ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দেন। এ সময় ১১ শিক্ষার্থী আহত হন। তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা বোর্ডের অফিস ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করে ভাঙচুরের চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের ওপর কোনো হামলা করা হয়নি।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার বলেন, কারও ফলাফল নিয়ে সন্দেহ হলে পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করতে পারে, এটিই সমাধান।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল হোসেন বলেন, ‘আমরা বোর্ড কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে সমাধানের একটি চেষ্টা করছি। আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যাঁদের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, তাঁরা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করতে পারেন।’
ঢাকা বাইরেও বিক্ষোভ
গতকাল বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বোর্ড ভবন কিছুক্ষণ অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিভিন্ন কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জড়ো নয়। সেখান থেকে ‘এইচএসসি ব্যাচ-২০২৪’-এর ব্যানারে মিছিল নিয়ে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ভবনে যান তাঁরা। পরে সেখানে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেয়।
এর আগে বোর্ড ভবন ঘেরাও করা হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করেন। ঢাকায় আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে সন্ধ্যায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় বোর্ড থেকে বের হন চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তারা।
ময়মনসিংহ শহরে গতকাল বেলা ১১টায় নগরের টাউন হল মোড়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে এইচএসসিতে অকৃতকার্য শতাধিক শিক্ষার্থী এসে জড়ো হন। সেখান থেকে তাঁরা নগরের কাঠগোলা এলাকায় শিক্ষা বোর্ডের কার্যালয়ে যান। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা বোর্ড ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অবরোধ করলে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাতেও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ড ভবন এলাকায় ছিলেন। বরিশাল নগরেও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সামনে ২ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় তাঁরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক আটকে রাখেন।
ফল বাতিলের দাবিতে গতকাল যশোর শিক্ষা বোর্ড ভবনের সামনে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ হয়েছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড ভবনের সামনেও। সেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। আর এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা তাঁদের পাস করানোর দাবিতে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।