শুক্রবার   ০২ মে ২০২৫ , ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১৫ মে ২০২৪

দেশে উইলসন রোগের নতুন দুই ধরন শনাক্ত 

দেশে উইলসন রোগের নতুন দুই ধরন শনাক্ত 

উইলসন এক ধরনের বিরল জিনগত রোগ, যা মানবদেহে কপারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। মা-বাবার কাছ থেকে সন্তানরা রোগটি পেয়ে থাকে। এতে যকৃৎ ও মস্তিষ্কের পাশাপাশি শরীরের আরো কিছু অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বংশগত রোগ হওয়ায় উইলসন সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হয় না। তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে রোগটিকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত ‌‘বাংলাদেশি উইলসেন্স রোগীদের মধ্যে জেনেটিক পরিবর্তন এবং এর স্নায়বিক উপসর্গ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব তথ্য জানান।

বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা নিতে আসা উইলসন রোগীর ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্ত রোগীর মধ্যে তিনটি মিউটেশন (জিনগত পরিবর্তন) হয়েছে, যার মধ্যে দুটিই বাংলাদেশে নতুন। টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বিএসএমএমইউয়ে তাদের চিকিৎসা চলছে।

বিএসএমএমইউয়ের নিউরোলজি ও অ্যানাটমি বিভাগের যৌথ গবেষণায় নতুন ধরনের বিষয়টি উঠে এসেছে।

গবেষকরা জানান, উইলসন রোগীর জেনেটিক গঠনে কোনো পরিবর্তন আসে কি না তার ওপর নজর রাখছিলেন তাঁরা।

উইলসন রোগের নতুন যে দুটি মিউটেশন শনাক্ত হয়েছে তাতে রোগীর আচরণের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলছে না বা ফেললেও তা খুব সামান্য।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব হেলাল এবং অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু।

প্রতিবেদন তুলে ধরে অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু বলেন, ‘গবেষণায় আমাদের মোট রোগী ছিল ৫০ জন। এর মধ্যে ২৮ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী। তাদের মধ্যে ছয় রোগীর তিনটি মিউটেশন পাওয়া গেছে, এর মধ্যে দুটিই বাংলাদেশে নতুন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি ৩০ হাজার জনে একজন উইলসন রোগে আক্রান্ত। সেই হিসাবে রোগীর সংখ্যা হবে ছয় হাজারের মতো।

বিএসএমএমইউয়ে এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ২০০ জনের চিকিৎসা দিয়েছি। কারো মধ্যে এই রোগ শনাক্ত হলে তাকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে সারা জীবন ভালো থাকার সুযোগ রয়েছে। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেলে এই রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’

ডা. লায়লা আনজুমান বানু বলেন, পরিবারের একজনের যদি রোগটি শনাক্ত হয়, তাহলে অন্য সদস্যদের পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি দ্রুত শনাক্ত করা গেলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব।

ডা. আহসান হাবিব হেলাল বলেন, এই গবেষণায় নিউরোলজি বিভাগের মুভমেন্ট ডিস-অর্ডার ক্লিনিক ও আন্ত বিভাগ থেকে রোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রোগী থেকে তিন মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করে অ্যানাটমি বিভাগের জেনেটিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে এবং এই ল্যাবে জেনেটিক অ্যানালিসিস করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের রোগীদের বয়সসীমা ছিল ৯ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। বেশির ভাগ রোগী পাওয়া গেছে ৯ থেকে ৩০ বছরের ভেতর এবং এই সংখ্যা ছিল ৪৩।’

রোগীদের উপসর্গ প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা যেসব রোগী পেয়েছি, তাদের মধ্যে ঢোক গিলতে সমস্যা ছিল ২৭ জনের, হাত-পায়ের কম্পন ছিল ২৮ জনের, হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া ছিল ২১ জনের, অনিয়ন্ত্রিত ঘাড় মোচড়ানোর সমস্যা ছিল ১৪ জনের, অনিয়ন্ত্রিত হাত-পা মোচড়ানোর সমস্যা ছিল ১১ জনের, নৃত্যের মতো অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া ছিল চারজনের।’

রোগটি কাদের হতে পারে, ‘এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মা-বাবা দুজনেরই যদি এই রোগের জিন থাকে, তাহলে সন্তানও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এ জন্য আমরা নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে না করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য ডা. দীন মো. নূরুল হক। উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ডা. আতিকুর রহমান, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) ডা. মনিরুজ্জামান, মেডিসিন অনুষদের ডিন ডা. আবু নাসার রিজভীসহ আরো অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়