ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন: জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির কথা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংস্কার কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা) অধিবেশন শুরু হলে পরে প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য দেন। তাঁর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে বিটিভি, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতার। এতে তিনি অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের উদ্যোগ, বৈশ্বিক সংকট, যুদ্ধ-সংঘাতসহ নানা ইস্যু তুলে ধরেন এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠন ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শুরু করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দ্রুত সংস্কার করার সহজ পথ না বেছে সরকার বেছে নিয়েছে কঠিন কিন্তু টেকসই পথ—অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্মাণের চেষ্টা চলছে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরশাসকের আবির্ভাব না ঘটে এবং নির্বাচিত নেতৃত্ব রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র নষ্ট করতে না পারে।
গণ–অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে দেওয়া ‘জুলাই ঘোষণা’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ঘোষণা সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতি সময়াবদ্ধ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে আগামী নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সংস্কার কার্যক্রমে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না।
অর্থনীতি ও পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনা
প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সুশাসন, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন। তিনি সমালোচনা করে বলেন, বিগত দেড় দশকে জবাবদিহিহীন উন্নয়ন জনগণের উপকারে আসেনি, বরং দুর্নীতি ও হীনস্বার্থে গৃহীত প্রকল্প অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আগের সরকারের আমলে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হয়েছে, যা পুনরুদ্ধার এখন সরকারের অগ্রাধিকার। তবে আইনি জটিলতা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে এই প্রচেষ্টা কঠিন হয়ে উঠছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত দিয়ে প্রকৃত মালিক—কৃষক, শ্রমিক ও করদাতাদের কাছে তা ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি আরও প্রস্তাব করেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক বিধিবিধান প্রণয়ন ও কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।