স্ত্রী পালিয়েছেন প্রেমিকের সঙ্গে, নতুন বউ আনলেন হেলিকপ্টারে

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর শান্ত-নিবিড় কাঠাদিয়া গ্রাম। শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ করেই গ্রামের আকাশে গর্জন তোলে একটি হেলিকপ্টার। সবাই ছুটে আসে মাঠে—কৌতূহল, উত্তেজনা আর আনন্দে ভরে ওঠে চারপাশ।
হেলিকপ্টার থেকে নামছেন এক তরুণী কনে, নাম তার নূপুর আক্তার (২৪)। হাতে মেহেদির রঙ, মুখে লাজুক হাসি। তার গন্তব্য বর কামাল হোসেনের (৩৯) বাড়ি।
কামালের জীবন ছিল একটু অন্য রকম। স্ত্রী সাথী আক্তার তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন অন্য এক পুরুষের সঙ্গে। নিয়ে গিয়েছিলেন দুই কন্যা সন্তান, নয় ভরি স্বর্ণ আর নগদ টাকা। শুধু সংসার নয়—কামাল হারিয়েছিলেন আত্মবিশ্বাসও। গ্রামে হাসিঠাট্টা, কটূক্তি, অপমান তাকে প্রতিদিন গিলে খেত। একসময় তিনি ভেবেছিলেন—“এই জীবন আর রাখব না।”
কিন্তু ঠিক তখনই আলো হয়ে এগিয়ে আসে নূপুর। একই গ্রামের এই তরুণী তার দুঃসময়ে হয়ে ওঠেন শক্ত ভরসা। সহমর্মিতা থেকে জন্ম নেয় ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসাকে অমর করতে কামাল সিদ্ধান্ত নেন—জীবনের দ্বিতীয় বিয়েটা করবেন অন্যরকমভাবে।
তাই শুক্রবার দুপুরে হেলিকপ্টারে চড়ে আসেন তার নববধূ। গ্রামে নেমে আসে উৎসবের আমেজ, মানুষ ভিড় করে দেখতে।
কামাল চোখে জল নিয়ে বললেন—
“প্রথম স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার আগে ভেবেছিলাম বিবাহবার্ষিকীতে হেলিকপ্টারে করে ঘুরব। সে স্বপ্ন ভেঙেছিল। কিন্তু আজ নূপুরকে সম্মান জানাতে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে এলাম।”
নূপুর হাসিমুখে উত্তর দিলেন—
“কামাল একজন ভালো মানুষ। তার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। সব জেনেশুনে আমি তার জীবনের সঙ্গী হতে রাজি হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, সুখের সংসার গড়তে পারব।”
নূপুরের মামা রিমন দেওয়ান বললেন,
“আমরা কামালকে ছোট থেকে চিনি। তিনি ভালো মানুষ। তাই নূপুরকে তার হাতে তুলে দিয়েছি। গ্রামের মানুষও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।”
কাঠাদিয়ার সেই দুপুরে একদিকে ছিল ভাঙা স্বপ্নের করুণ স্মৃতি, অন্যদিকে নতুন আশার উজ্জ্বল সূচনা। হেলিকপ্টারের শব্দ মিলিয়ে গেলেও গ্রামের মানুষের মনে রয়ে গেল এক অদ্ভুত গল্প—ভালোবাসা, হারানোর বেদনা আর নতুন করে শুরু করার সাহসের গল্প।