জাতিসংঘে সংস্কারযাত্রার গল্প তুলে ধরলেন ইউনূস, ভোট আয়োজনের অঙ্গীকার

নোবেল বিজয়ী ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মঞ্চে দেশের এক বছরের সংস্কার যাত্রা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেছেন।
শুক্রবার নিউইয়র্কে সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভাষণ দেন তিনি। বাংলায় প্রদত্ত এ ভাষণে ইউনূস বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকবান্ধব সংস্কার অব্যাহত রয়েছে।”
অভ্যুত্থান থেকে সংস্কারের পথচলা
ভাষণের শুরুতে তিনি স্মরণ করান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানকে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া সেই গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ হারান সহস্রাধিক মানুষ, যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কারের নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
ইউনূস বলেন, “আমরা সহজ পথের পরিবর্তে বেছে নিয়েছি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পথ—যাতে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন অটুট থাকে।”
১১টি সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য
তিনি জানান, শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমনসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের জন্য ১১টি স্বাধীন কমিশন কাজ করছে। পাশাপাশি ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যারা সংস্কার কর্মসূচিকে সময়বদ্ধ ও টেকসই করেছে।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন
ভঙ্গুর অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংস্কার, বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার এবং পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি। শ্রম অধিকার সংস্কার ও তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগও তুলে ধরেন ইউনূস।
জলবায়ু সংকট ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।” একই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ ও সশস্ত্র সংঘাত বৃদ্ধির ঝুঁকি নিয়েও সতর্ক করেন।
রোহিঙ্গা সংকট
রোহিঙ্গাদের ন্যূনতম জীবনমান টিকিয়ে রাখতে জরুরি তহবিল বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি রাখাইন সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ ও রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
ফিলিস্তিন ইস্যু
গাজায় চলমান সহিংসতাকে ‘নির্বিচার গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ইউনূস বলেন, “পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন ছাড়া স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।”
তিন শূন্যের পৃথিবী
নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মকে শূন্য কার্বন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণ এবং শূন্য বেকারত্বের পৃথিবী উপহার দিতে হবে।
“এ তিন শূন্য বাস্তবায়নের স্বপ্নই হোক জাতিসংঘের যৌথ অঙ্গীকার।” —এই কথায় শেষ করেন তিনি তাঁর ভাষণ।