বুধবার   ১৫ অক্টোবর ২০২৫ , ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদ নিয়ে নতুন সংকট, সন্ধ্যায় দলগুলোর সঙ্গে ‘জরুরি’ বৈঠক

জুলাই সনদ নিয়ে নতুন সংকট, সন্ধ্যায় দলগুলোর সঙ্গে ‘জরুরি’ বৈঠক

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ঘিরে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার কারণেই এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ অবস্থায় আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘অতি জরুরি’ বৈঠক ডাকেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

এর আগে কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনিই, যিনি কমিশনের প্রধানও। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

এ ছাড়া বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

বাস্তবায়ন নিয়ে মতভিন্নতা

৬টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে তৈরি জুলাই জাতীয় সনদ আগামী শুক্রবার স্বাক্ষর হওয়ার কথা। গত মঙ্গলবার রাতে এর চূড়ান্ত অনুলিপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। তবে সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি।

দলগুলো গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে একমত হলেও গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। কোনো কোনো দল সনদে সইয়ের আগে বাস্তবায়ন পদ্ধতির নিশ্চয়তা চায়।

এনসিপির কঠোর অবস্থান

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মঙ্গলবার রাতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়। বৈঠকে তারা জানায়, ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু না হলে তারা সনদে সই করবে না। দলটির দাবি, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় তারা ছাড় দিয়েছে, এবার আর ছাড় দেবে না। তারা বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার নিয়ে নতুন আলোচনা শুরুর দাবি তুলেছে।

জামায়াত ও বাম দলগুলোর সংশয়

চূড়ান্ত সনদে বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় জামায়াতে ইসলামী সই করবে কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। দলটির এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, “সনদের মধ্যে যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে থাকলে আমরা সই করব। তবে নানা অপতৎপরতার খবরও শুনছি।”

অন্যদিকে বামপন্থী কয়েকটি দলও সনদে সই না করার ইঙ্গিত দিয়েছে। বিএনপি আগেই সনদের অঙ্গীকার অংশে একটি ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু কমিশন সেটি অন্তর্ভুক্ত করেনি।

কমিশনের প্রস্তুতি ও পরবর্তী ধাপ

ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যার বৈঠকে দলগুলো সনদে সই করবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। প্রয়োজনে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়েও আবার আলোচনা হবে। এই বৈঠকটি বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, “আজ সন্ধ্যার বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে কমিশন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসবে।”

২০১২ সালে শুরু হওয়া এই সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জুলাই সনদকে দেশের রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তবে বাস্তবায়নের পথনকশা নিয়ে বিভেদ না মিটলে সনদ স্বাক্ষরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়