কিউএস র্যাংকিং: অক্সফোর্ড, কেমব্রিজকে টপকে শীর্ষে ইমপেরিয়েল কলেজ লন্ডন
ঐতিহ্যের অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মত যুক্তরাজ্যের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের ইমপেরিয়ার কলেজ লন্ডন।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক টাইমস লিখেছে, সেরা বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ের অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজের মত বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটির নাম শীর্ষে না থাকার ঘটনা গত এক দশকের মধ্যে এই প্রথম।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) র্যাংকিংয়ে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের সেরা দেড় হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ষষ্ঠ থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ইমপেরিয়ার কলেজ লন্ডন। দশ বছর আগে ইমপেরিয়েল কলেজ কেমব্রিজের সঙ্গে যৌথভাবে এ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল।
স্যার ব্রায়ান মে, আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এবং এইচজি ওয়েলসের মত ব্যক্তিরা রয়েছেন এ শিক্ষায়তনের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে।
টানা ১৩ বছর এই তালিকার শীর্ষে থাকা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) এবারো গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
অক্সফোর্ড গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে তৃতীয় স্থানটি ধরে রাখতে পারলেও কেমব্রিজ দ্বিতীয় স্থান থেকে নেমে গেছে পঞ্চমে। হার্ভার্ড আগের বছরের মতই চতুর্থ এবং ইউসিএল নবম অবস্থানে রয়েছে।
সব মিলিয়ে যুক্তরাজ্যের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ দশে স্থান করে নিয়েছে এবার। যে ৯০টি ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটিকে কিউএস র্যাংকিংয়ের জন্য বিচার করা হয়েছে, তার মধ্যে ২০টির অবস্থানে গতবারের চেয়ে উন্নতি হয়েছে, অবনমন ঘটেছে ৫২টির। ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় আগের অবস্থানেই রয়েছে।
ইমপেরিয়েলের উন্নতির কারণ ব্যাখ্যা করে কিউএস এর প্রধান নির্বাহী জেসিকা টার্নার বলেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের গবেষণামূলক পড়াশোনা এবং কর্মসংস্থানের স্কোরে এগিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, “এই ফলাফল দেখাচ্ছে, যুক্তরাজ্যের বর্তমান বাস্তবতায় উচ্চশিক্ষা তহবিলে ঘাটতি এবং বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইমপেরিয়েলের উত্থান প্রশংসনীয়।
“আসছে জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনের ফল যাই হোক না কেন, পরবর্তী সরকারকে অবশ্যই উচ্চশিক্ষা খাতকে জরুরিভাবে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন যুক্তরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সে অনুযায়ী এই খাতের রক্ষাণাবেক্ষণ আবশ্যক।”
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর হিউ ব্র্যাডি বলেন, “ইম্পেরিয়ালের এই র্যাংকিং আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গুণমান তুলে ধরেছে। এবং ভালো করা বা এগিয়ে যাওয়ার যে প্রত্যয় বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছিল, সেটির বাস্তবায়ন হয়েছে।”
বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশের ১৫০০টি বিশ্ববিদ্যালয় এই র্যংকিংয়ের আওতাভুক্ত ছিল। ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৬৮ জন শিক্ষাবিদ এবং ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৬ জন নিয়োগকর্তার মতামতের ভিত্তিতে এই র্যাংকিং তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা, উদ্ভাবন, চাকরিতে স্নাতকদের কর্মক্ষমতা, নিয়োগযোগ্যতা, প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাফল্য, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক, গবেষণা প্রবন্ধের সাইটেশন, পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংখ্যা, আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুপাত, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী বিনিময়ের হারসহ কয়েকটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে তালিকা তৈরি করেছে কিউএস।
এবারে তালিকায় শীর্ষ ২০ এর মধ্যে চীনের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এসেছে। এর মধ্যে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় ১৭তম স্থান থেকে তিন ধাপ এগিয়ে ১৪তে উঠে এসেছে। আর সিনহুয়া ২৫তম স্থান থেকে পাঁচ ধাপ এগিয়ে দশম স্থানে এসেছে। এছাড়া সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিয়েছে শীর্ষ ২০ এর মধ্যে।
এডিনবরা ইউনিভার্সিটির অবস্থান এবারের তালিকায় ২৭তম। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি নেমে গেছে ৩৪ নম্বরে। কিংস কলেজ লন্ডন যৌথভাবে ৪০তম স্থান ধরে রেখেছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স যৌথভাবে ৫০তম হয়েছে কিউএস র্যাংকিংয়ে।
শীর্ষ একশ বিশ্বদ্যালয়ের মধ্যে আরো রয়েছে ব্রিস্টল, ওয়ারউইক, গ্লাসগো, বার্মিংহাম, সাদাম্পটন, লিডস এবং ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়।